Saturday, April 20, 2024
spot_img
HomeUncategorizedশেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সুন্দরবনের বড়দা সন্তোষ বর্মন

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সুন্দরবনের বড়দা সন্তোষ বর্মন

স্মৃতিচারণায় গ্রন্থাগারিক দীপক মাইতি

সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চিরতরে চলে গেলেন সুন্দরবনের বড়দা সন্তোষ বর্মণ।বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। ৭ নভেম্বর সকালেও কথা হয়েছিল৷ অসুস্থ ছিলেন কিন্তু চেয়ারে বসে ছিলেন, সামনের মেঝেতে ছড়ানো ছিল তাঁর গর্বের সংগ্রহ পৃথিবীর ৭০ জন সেরা অঙ্কন শিল্পীদের জীবনী ও কাজ৷ বলছিলেন, একসময় বিদ্যাসাগর সাধারণ পাঠাগারের সংগ্রহে রাখার কথা৷

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সুন্দরবনের বড়দা সন্তোষ বর্মন

সহধর্মিণীর নামে “ইন্দিরা সুরস্বর্গ” এর রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, অতুলপ্রসাদ, বাউল, টপ্পা ভজনের স্বরলিপি সংগ্রহ৷ তেভাগা আন্দোলনের ভূমিপুত্র হিসাবে তাঁর ক্ষেত্রসমীক্ষার সমৃদ্ধ ইতিহাস “লালবাগানের শিশু তেলেঙ্গানা “, তেভাগা আন্দোলনে নারী সমাজ”, বেড়মজুরের তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস”। এই গ্রন্থ গুলি গবেষণা গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে ৷ এছাড়াও পান্ডুলিপি প্রকশনা থেকে প্রকাশিত তাঁর রচিত “আমার হারিয়ে যাওয়া দিনগুলি” আদি সুন্দরবনের তথ্যসমৃদ্ধ একটি দলিল ৷

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সুন্দরবনের বড়দা সন্তোষ বর্মন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে তিনি কাকদ্বীপের সবার কাছে ছিলেন “বড়দা”৷ অভিভাবকের মত দীর্ঘদিন বিদ্যাসাগর সাধারণ পাঠাগারের সভাপতি পদের দায়িত্বে সামলেছেন৷ অভিভাবক হিসাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা পত্রপত্রিকা সমিতির সভাপতিত্ব করেছেন। একসময় কাকদ্বীপের শুকদেব স্মৃতি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির দায়িত্ব সামলেছেন ৷

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সুন্দরবনের বড়দা সন্তোষ বর্মন

ব্যক্তিগত জীবনে নিয়মিত সকাল সাড়ে আটটায় অসমর্থ হাতেও সরোদের তারগুলোতে হাত বোলাতেন ৷ এই কয়েকদিন আগেও ভোর সাড়ে পাঁচটায় আকাশবাণীর প্রভাতী অনুষ্ঠানের জন্য রেডিওর শব্দে আমার ঘুম ভেঙেছে৷ চোখ না খুলেও বুঝতাম মানুষটির উপস্থিতি ৷ মাঝে মাঝে অসুস্থ হতেন ৷ অসমর্থ শরীরে ডাক দিয়ে আমাকে না পেয়ে জানালা দিয়ে আয়নার প্রতিফলন দিয়ে আমাকে ডাকতেন৷

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সুন্দরবনের বড়দা সন্তোষ বর্মন

কত আবদার ছিল আমার কাছে৷ পাঠাগারের সারি সারি পত্রপত্রিকা বাঁধাই করতেন৷ গর্ব করে বলতেন, আমি পাঠাগারের বাইন্ডার ৷ পাঠাগারের নবনির্মিত ভবনে তাঁর অমূল্য সম্পদের ঠাঁই করে দিতে না পারার আফশোষ আমার থেকে যাবে। সকলের শ্রদ্ধা আদায় করে নিতে পারতেন।

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সুন্দরবনের বড়দা সন্তোষ বর্মন

এখন আর মুখে মুখে আদি সুন্দরবনের নারী সমাজ বা সুন্দরবনের লট প্লট বিভাজন বা নামাঙ্কনের ইতিহাস মুখে মুখে জানার মাধ্যম আর রইলো না। তাঁর কাছে অনেক শিখেছি৷ তাঁর কাছে যা পেয়েছি তার কিছুই বলতে পারলাম না। আরও কিছু কথা বলার ইচ্ছা রইল৷নামখানা থানার শিবরামপুর পঞ্চায়েতের রাজনগর গ্রামের ভূমিপুত্র কর্মসূত্রে কাকদ্বীপের বড়দা হতে পেরেছিলেন সহজ সরল জীবনযাত্রার গুণেই।

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সুন্দরবনের বড়দা সন্তোষ বর্মন

দুইপুত্র, দুই কন্যা ও নাতি নাতনির ভরা সংসার থেকে তাঁর চলে যাওয়া অনেকটা রাজার মত। তবে বড়দার এই চলে যাওয়ায় কাকদ্বীপের গুণীজন বলতে যাঁদের বুঝি তাদের একটা অধ্যায় শেষ হল৷ তিনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।

Most Popular