বান্টি মুখার্জি, ক্যানিং: বৃহস্পতিবার সকালে অভিনবভাবে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পালন করলেন প্রত্যন্ত সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের বালি ২ নম্বর দ্বীপের পার্বতী মণ্ডল, যমুনা মণ্ডল, বৃহস্পতি মণ্ডল, রাধারাণী মণ্ডল’রা। এদিন সকালে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের গায়ে চন্দনের ফোঁটা, ফুলদুর্বা দিয়ে মঙ্গল কামনা জানিয়ে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উদযাপন করেন তাঁরা। পাশাপাশি এলাকার পরিতোষ মণ্ডল, গৌতম নস্কর সহ অন্যান্যদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে দীর্ঘায়ু কামনা করে শুরু করেন বিদ্যাধরী নদীর চরে ম্যানগ্রোভ রোপণের কাজ।
এদিন বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রায় ১০ হাজার ম্যানগ্রোভ চারাগাছ রোপণ করেন তাঁরা। প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বালি দ্বীপের মহিলাদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা।স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত দিনে আয়লা, ফণি, বুলবুল, আম্ফান, ইয়াস, তিতলি, সিত্রাং নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সুন্দরবনের বুকে ব্যাপক ভাবে তান্ডব চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে। অসংখ্য ম্যানগ্রোভ নষ্ট হয়েছে।
পাশাপাশি এলাকার দুষ্কৃতীরা রাতের অন্ধকারে ম্যানগ্রোভ চুরি করে ধ্বংসের পথে এগিয়ে দিচ্ছে বিশ্বখ্যাত ঐতিহ্যবাহী বাদাবন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আস্তানা সুন্দরবনকে। সুন্দরবন রক্ষার লক্ষ্যে করা উদ্যোগ নিয়ে সেই কাজ শুরু করেছেন বালি ২ দ্বীপের ‘সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’। বিগত দিনে এলাকার বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ রোপণ করেছেন তাঁরা।বৃক্ষরোপণ করে সুন্দরবনকে বাঁচানো জরুরি, এমন বার্তা পৌঁছে দিতে এবার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিল সুন্দরবন ফাউন্ডেশন।
তাদের উদ্যোগে এলাকার মহিলারা তৈরি করছিলেন ১০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ চারাগাছ।
বৃহস্পতিবার সকালে সেই সমস্ত ম্যানগ্রোভের চারাগাছ নিয়ে এলাকার মহিলারা হাজির হন বিদ্যাধরী নদীর তীরে। সেখানে স্নান সেরে সুচিবস্ত্র পরে, গাছকে ধূপ, ফুল, দূর্বা, চন্দনের ফোঁটা এবং মিষ্টি দিয়ে শঙ্খ বাজিয়ে উলুধ্বনি দিয়ে ভাইফোঁটা করেন। পরে সকল মহিলারা মিলিত ভাবে ১০ হাজার ম্যানগ্রোভ চারাগাছ রোপণ করেন বিদ্যাধরী নদীর চরে।
এমন ভাইফোঁটা সম্পর্কে সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের অন্যতম অধিকর্তা প্রসেনজিৎ মণ্ডল বলেন, সুন্দরবনের নদীবাঁধ রক্ষা করা এবং ম্যানগ্রোভ রোপণ অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে অচিরে বিলীন হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী সুন্দরবন। সেই কারণে সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গাছেদের ভাই সম্পর্কে আবদ্ধ করে গ্রামের মহিলারা ভাইফোঁটা দিয়ে ম্যানগ্রোভ চারাগাছ রোপণ করেছেন।
তাছাড়াও একমাত্র মহিলারাই পারেন সমাজকে কলঙ্কমুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে যেতে। কারণ তাঁরা মায়ের সমতুল্য। মা তাঁর কোলের সন্তানকে যেভাবে সযত্নে লালনপালন করে বড় করে তোলেন, তেমনই মায়েরাই পারেন সুন্দরবনকে রক্ষা করতে। সেই কারণে গ্রামের মায়েদের ম্যানগ্রোভ রোপণে উদ্যোগী করা হয়। এই কাজ ধারাবাহিক ভাবে চলবে।
