Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeকলকাতাআভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

আভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

রাজকুমার সূত্রধর, কলকাতা : আভিজাত্য ও মর্যাদার দিক থেকে ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’-র সঙ্গে ‘দুরন্তকে’ এক আসনে বসানোহয়েছে। ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ সেইভাবেই তুলে ধরার চেষ্টা করে আসছে। কারণ, দু’টি ট্রেনের
সমস্ত কামরাই বাতানুকুল। ভিতরে যাত্রী নিরাপত্তা সাংঘাতিক। সারাক্ষণ নজরদারি নিরাপত্তা
কর্মীদের।

আভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

ঝকঝকে তকতকে সব কামরা। নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে যাওয়া যায়। খাওয়া-দাওয়ার
ব্যবস্থাও রয়েছে। এখনও পর্যন্ত অন্য এক্সপ্রেস এর তুলনায় দু’টির গতি-ই সবচেয়ে বেশি। সব
মিলিয়ে ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টায় শিয়ালদহ ও হাওড়া থেকে নয়াদিল্লি খুব কম সময়ে যাতায়াত করা
যায়। এজন্য যাত্রী ভাড়াও আকাশছোঁয়া। মাথা পিছু রাজধানী এক্সপ্রেসে ৩২২৭ টাকার কিছু বেশি।

আভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

দুরন্ত এক্সপ্রেসে ৩৫২৭ এর বেশি। এই সব কারণে সচ্ছল মানুষেরা এই দু’টি মর্যাদা সম্পন্ন
এক্সপ্রেসে এখন বেশি যাতায়াত করছেন। কিন্তু এর ভিতর বাতানুকুল ঝকঝকে অভিজাত তালিকায়
ঠাঁই করে নেওয়া দুরন্ত এক্সপেসের নামে কালির দাগ পড়ে গেল। কারণ তার নিরাপত্তা নিয়ে বড়
ধরণের প্রশ্ন উঠেছে। আসলে এ হেন বড়াই করা দুরন্ত এক্সপ্রেসের বাতানুকুল কামরায় ঢুকে
যাত্রীদের কাছ থেকে লাগেজ ছাড়াও নগদ টাকা সহ ব্যাগ ও সোনার জিনিস লুট করে নিয়ে গিয়েছে
দুস্কৃতীরা।

আভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

একই সময়ে তিনটি কামরায় ঢুকে একই অপারেশন চালিয়েছে লুটেরার দল। রবিবার ভোর
রাত সাড়ে তিনটের সময় ডাউন দুরন্ত এক্সপ্রেস (১২২৭৪) এ এমন দুঃসাহসিক ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাটি ঘটে পাটনা স্টেশন থেকে এক্সপ্রেস ছেড়ে আধ ঘণ্টা পথ অতিক্রম করার পর। অবাক
বিষয় হল, পর পর তিনটি কামরায় একই সময়ে এমন লুট হলেও নিরাপত্তা রক্ষীদের অস্তিত্ব
খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

সর্বস্বাস্ত যাত্রীদের চিৎকারে কামরায় থাকা ঘুম থেকে ওঠা যাত্রীরা যখন
ছুটে যান, ততক্ষণে লুটেরার দল দরজা খুলে অন্ধকারের নেমে উধাও হয়ে গিয়েছে। শোরগোল শুনে
পরবর্তী সময়ে টিকিট পরীক্ষক থেকে রেলের প্যান্ট্রি কার এর কর্মীরা সেখানে এসে খোঁজখবর
নেন। কিন্তু যাত্রীরা ততক্ষণে ক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। সকল যাত্রীর একটাই কথা, এত দামী
ট্রেনে নিরাপত্তারক্ষী নেই কেন?

আভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

কীভাবে দুস্কৃতীরা বাতানুকুল কামরায় ঢুকে এমন দুঃসাহস
দেখিয়ে পার পেয়ে গেল? রেলের টিটি থেকে অন্য কর্মীরা অবশ্য নীরব হয়ে ছিলেন। কারণ সে সময়
তাঁদের উত্তর দেওয়ার মতো কোনও কথা ছিল না। যদিও এই বার্তাটি দিল্লি থেকে হাওড়া পর্যন্ত
রেল কর্তা থেকে পুলিশ পদাধিকারিদের কাছে দ্রুত পৌঁছে যায়। তাতে চরম অস্বস্তিতে পড়েন
উপরমহল। দুরন্ত এক্সপ্রেস আসানসোল পৌঁছালে রেল পুলিশের আধিকারিকরা লুট হওয়া কামরায়
এসে ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।

আভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

তাদের অভিযোগ জমা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
কিন্তু যাত্রীরা জানিয়ে দেন, হাওড়া স্টেশনে নেমে অভিযোগ করবেন। সেইমতো এদিন বেলা ১১ টা
২৫ মিনিট নাগাদ ডাউন দুরন্ত হাওড়াতে পৌঁছলে রেল পুলিশ ও রেলের আধিকারিকরা চলে আসেন।
মহিলা পুলিশের বিশেষ দল লুট হওয়া কামরায় ঢুকে ছবি তুলে নেন। এরপর তিন কামরায়
ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের সঙেগ নিয়ে রেল পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করেছে। কামরায় থাকা এক টিকিট
পরীক্ষক পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন যে, এ, বি ওয়ান এবং বি টু তিনটি কামরায় ঢুকে লুট
হয়েছে।

আভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

ওই দুরন্ত এক্সপ্রেসের বি-ওয়ান কামরায় ৪১ বছর বয়সী এস. কে. দাস ছিলেন এই ঘটনার
প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাকদ্বীপ মহকুমা শহরে। তিনি একটি ইউ
টিউব চ্যানেল এবং দৈনিক খবর কাগজের সম্পাদক। ওই পত্রিকা সংক্রান্ত কাজে নিউ দিল্লি
গিয়েছিলেন গত ৩ জুলাই। এদিন হাওড়া প্ল্যাটফরমে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হচ্ছিল। তাঁর
কথায়, যাওয়ার সময় শিয়ালদহ থেকে রাজধানীতে উঠেছিলাম। বিকেল ৫ টা ৪০ মিনিটে ট্রেন
ছেড়েছিল।

আভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

শুরু থেকে সব সময় বাতানুকুল আমাদের সব কামরায় ছিল কড়া নজরদারি। পুলিশ কুকুর
নিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের বিচরণ ছিল দেখার মতো। এছাড়া রাতভর ও দিল্লি পৌঁছানো পর্যন্ত
আগ্নেয়াস্ত্র হাতে কামরায় কামরায় ছিল রক্ষীরা। ট্রেনের রেলের প্যান্ট্রিকারের লোকজনের
আথিতেয়তাও মুগ্ধ করেছে। নিশ্চিন্তে যাওয়ার পর্ব মিটলেও ফেরার সময় বিভ্রাট হল। ৯ জুলাই
নিউ দিল্লি থেকে ১২ টা ৪০ মিনিটে উঠি। বি ওয়ান কামরার মাঝামাঝি মিডল বার্থ এ ছিলাম।
ট্রেনটি এক থেকে দেড় ঘণ্টা লেটে চলছিল।

আভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

সেই কারণে পাটনা স্টেশনে যেখানে রাত ১২ টা ৪০ এপৌঁছানোর সময় ছিল। সেখানে তা পৌঁছায় ভোর তিনটের সময়। ওই সময় সকলেই ঘুমে অচেতন।পাটনা জংশনে আমার বগি থেকে দু’জন নেমে যান। ঘুমিয়ে থাকার জন্য তা টের পাইনি। দুরন্ত পাটনাথেকে আধ ঘণ্টা পথ পেরিয়ে আসার পর একটি জায়গাতে থেমে যায়। কেন সেখানে দাঁড়ালো জানতে
পারিনি। তবে আচমকা বগির ভিতর সামনের গেটের দিক থেকে চিৎকার শুনতে পাই।

আভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

চোর চোর বলে তিনি চিৎকার করেন। বলেন, আমার ব্যাগ নিয়ে গেল। ধরো ধরো। ওইখানে বহরমপুরের বাসিন্দা
তনুশ্রী রায় সাইট লোয়ার বার্থে শুয়ে ছিলেন। অন্ধকারের ভিতর তাঁর মাথার তলায় থাকা একটি
ব্যাগ কে বা কারা টেনে যেতেই তিনি এমন কথা বলছিলেন। ধড়মড় করে উঠে পড়লাম। এরপর
অনেকের ঘুম ভেঙে গেল। দু’জন চোর ঢুকেছিল। তারা দ্রুতগতিতে দরজা খুলে বাইরে অন্ধকার
রেললাইনের উপর ঝাঁপ দিল।

আভিজাত্যপূর্ণ ট্রেনেও এবার যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন!

তনুশ্রী দেবী নিজের লাগেজ খুঁজে না পেয়ে হাউহাউ করে কেঁদে
ফেললেন। বললেন, ব্যাগে সোনার জিনিস ছাড়াও আরও জিনিস ছিল। এছাড়া মাথার তলার ব্যাগে
দু’টি মোবাইল ছিল। তাও নিয়ে গিয়েছে। তনুশ্রী দেবীর কথায়, এত টাকা দিয়ে টিকিট কেটে দুরন্ততে
এমন সর্বস্বাস্ত হতে হবে ভাবিনি।
(চলবে)

Most Popular