রবীন্দ্রনাথ সামন্ত, পাথরপ্রতিমা: উচ্চ মাধ্যমিকে মেধাতালিকায় রাজ্যে অষ্টম স্থান করে নেওয়া পাথরপ্রতিমার সৌমেন পাত্র তাঁর স্বপ্নপূরণের জন্য সরকারি-বেসরকারি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চান। কিন্তু বাবা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দু’মুঠো অন্ন জোগাতে তাঁর কঠিন অবস্থা। ছেলেকে আর পড়াতে পারবেন না।
সৌমেন বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯১। বাংলায় পেয়েছে ৯৬, ইংরেজিতে ৯৮, গণিতে ৯৯, কেমিস্ট্রিতে ৯৯, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে ৯৯, ফোর সাবজেক্ট ফিজিক্যাল সায়েন্সে ৮৭। সৌমেন পাথরপ্রতিমা ব্লকের শ্রীধরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপেন্দ্রনগর গ্রামের হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে কাকদ্বীপের বামানগর সুবালা উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতায় পড়াশোনা করেছেন। এছাড়াও ওই স্কুলের তুহিন দাস মেধাতালিকায় রাজ্যে নবম এবং পূর্ণেন্দু কয়াল দশম স্থান দখল করেছেন।সৌমেন নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাও করেন। তবে ফুটবল তাঁর প্রিয় খেলা। সৌমেনের রেজাল্ট শুনে তাঁর বাবা তপন পাত্র এবং মা অনিমা দেবী খুব খুশি হয়েছেন। বামানগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, সৌমেন পড়াশুনায় ভাল।
দু’বছর লকডাউন থাকার কারণে ক্লাস হয়নি। সে কারণে ছাত্রদের হস্টেলে রেখে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হস্টেলে কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকরা নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কোভিড বিধি মেনে ছাত্রদের কোচিং করাতেন। যার পুরোটাই দেখভাল করতেন হোস্টেল সুপার। সেই ব্যবস্থার জন্য আমাদের বিদ্যালয়ের সৌমেন সহ তিনজন ছাত্র রাজ্যের মেধাতালিকায় অষ্টম, নবম ও দশম স্থান দখল করে বিদ্যালয়কে গৌরবান্বিত করেছে বলে প্রধান শিক্ষক জানান।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খুব ইচ্ছা সৌমেনের। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে তাঁর এই প্রবল ইচ্ছা কী করে পূরণ হবে, সেই ভাবনায় রয়েছেন সৌমেন। তিন বছর আগে তাঁর বাবা-মা রোজগারের জন্য দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। দিদির বিয়ের খরচ সামলাতে হয়েছে সৌমেনের বাবাকে। তাই বাবা সৌমেনকে বলেছেন, পড়াশোনার খরচ আর তিনি করতে পারবেন না।
সরকারি বা বেসরকারিভাবে যদি আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়, তাহলে হয়তো তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন বলে সৌমেন জানিয়েছেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে সৌমেনও দিল্লিতে মা-বাবার সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট শুনে সৌমেন এখন বাড়ি ফিরছেন।