Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeরাজ্যঅনটনের জন্য কেরোসিন তেল কেনার ক্ষমতা নেই, তাই গভীর রাতে রাস্তার বাতিস্তম্ভের...

অনটনের জন্য কেরোসিন তেল কেনার ক্ষমতা নেই, তাই গভীর রাতে রাস্তার বাতিস্তম্ভের তলায় বসে পড়াশুনা করেন রাহুল

রাজকুমার সূত্রধর, কলকাতা ঃ বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে কলকাতা শহরে এসেছিলেন বালক ঈশ্বরচন্দ্র। ভয়ঙ্কর আর্থিক অনটনের কারণে ঘরে হ্যারিকেন জ্বালানোর জন্য কেরোসিন তেল কেনার সাধ্য ছিল না। ফলে সন্ধ্যার পর বই-খাতা নিয়ে রাস্তার ধারে বাতিস্তম্ভের তলায় বসে পড়াশুনা করে নিতেন। একদিন নয়, প্রতিদিন এটাই ছিল ঈশ্বরের রুটিন। আশ্চর্য রকম মিল কলকাতার গড়িয়ার মণ্ডল পাড়ার রাহুল ঠাকুরের। তাঁরও কেরোসিন তেল কেনার সাধ্য নেই। কারণ বাবা খুবই গরিব। রাস্তার ধারে একটি অস্থায়ী ঘরে সেলুন আছে।

অনটনের জন্য কেরোসিন তেল কেনার ক্ষমতা নেই, তাই গভীর রাতে রাস্তার বাতিস্তম্ভের তলায় বসে পড়াশুনা করেন রাহুল

সেখানে চুল কেটে যা আয় হয় তা দিয়ে ছ’ থেকে সাতজনের কোনও রকমে টেনেটুনে সংসার চলে। ছোট একটা ভাড়ায় নেওয়া ঘুপচি ঘর। তাতে বোন, বাবা, মা ও পরিজনদের গুতোগুতি করে থাকতে হয়। ফলে সেখানে বসে পড়াশুনার জায়গা নেই। তাই রাত গভীর হলে সকলে যখন ঘুমিয়ে পড়ে, রাহুল একেবারে চুপিচুপি বেরিয়ে আসেন। এরপর রাস্তার ধারে পুরসভার বাতিস্তম্ভের তলায় বসে নিশিচন্তে পড়াশুনা করেন। রাত যত গভীর হয়, পড়াশুনা ভালো হয়। কখনও কখনও তা রাত দুটো থেকে তিনটে বেজে যায়। মশা কামড়ায়, কখনও কখনও টহলদারি পুলিশ এসে জানতে চায়, এই ছোকরা এত রাতে এখানে কেন? কোনও মতলব আছে না কি? মুখে করুণ হাসি এনে বইটা তুলে ধরে। তা দেখে পুলিশ চলে যায়।

অনটনের জন্য কেরোসিন তেল কেনার ক্ষমতা নেই, তাই গভীর রাতে রাস্তার বাতিস্তম্ভের তলায় বসে পড়াশুনা করেন রাহুল

সকাল হলে আরও অনেক কাজ করতে হয়। বাবার সঙ্গে সেলুনে চুল কাটতে হয় প্রতিদিন। না হলে পড়ার পয়সা আসবে কোথা থেকে। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র যখন তখন থেকেই এইভাবে পুরসভার আলোতে পড়ে আসছেন। তারপর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে এ স্নাতক হয়েছেন বাতিস্তম্ভের তলায় বসে। এখন ইগনুতে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি করতে দূরশিক্ষা কোর্সে ভরতি হয়েছেন। সেই রাত গভীর হলে বাতিস্তম্ভের তলায় বসে পড়া চলছে। একমাত্র তাঁর বাবা ওমপ্রকাশ ঠাকুর এটা জানেন। এ ছাড়া এটা ঘরের কেউ জানে না। পাড়ার পড়শি থেকে কাউন্সিলর একজনও এখনও পর্যন্ত জানতে পারেনি কয়েকশো বছর আগে বিদ্যাসাগরের মতো করে তাঁর পথ ধরে গভীর রাতে বাতিস্তম্ভের আলোয় এখনও একজন পড়ুয়া পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে।

অনটনের জন্য কেরোসিন তেল কেনার ক্ষমতা নেই, তাই গভীর রাতে রাস্তার বাতিস্তম্ভের তলায় বসে পড়াশুনা করেন রাহুল

রাহুলের কথায়, কি হবে বলে। এসব বলার মতো নয়। বিদ্যাসাগর মহাশয় আমার আদর্শ। তিনি শিখিয়েছেন যে, কীভাবে চরম দারিদ্রতার সঙেগ লড়াই করে এগিয়ে যাওয়া যায়। তাঁর ছবিকে সামনে রেখে তাই এই লড়াই চালাচিছ। বিহারের অখ্যাত একটি গ্রাম থেকে বাবা ওমপ্রকাশ ঠাকুরের হাত ধরে বালক রাহুল এসেছিল এই কলকাতায়। তখন রোজগারহীন অবস্থা বাবার। এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতে কলকাতার শেষ প্রান্ত রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে এসে একটি ভাড়া বাড়িতে ঠাঁই হয়। তারপর থেকে লড়াই চলছে। রাহুলের বাবা বলেন, ছেলেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনয়ারিং পড়ানোর খরচ যোগাতে এবার দেশের জমি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। কিন্তু তাতে আক্ষেপ নেই। এই একনিষ্ঠ ছাত্রের শুধু একটাই প্রার্থনা, ঝড় বৃষ্টি যাতে না হয়। তাহলে খোলা আকাশের নীচের এই পাঠশালা
বন্ধ হয়ে যাবে।

Most Popular